বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৭

পহেলা বৈশাখ নাকি অপসংস্কৃতি চর্চা ?

ছোটবেলায় মফস্বল ও গ্রামেই বেড়ে উঠা । তাই নববর্ষ শব্দটা টিভিতে শোনা ছাড়া এই কালচারের সাথে তেমন সখ্যতা হয় নি । আমরা ১লা বৈশাখকে আমের বিয়ে বলেই জানতাম । গ্রামের মুরব্বীরা শিখিয়েছেন । ১লা বৈশাখের আগে আম অপরিপক্ষ থাকে তাই মুরুব্বীরা হয়ত সদ্য নিষিক্ত আম বাঁচাতে বাচ্ছাদের এসব বলে বেড়াতেন । এদিনের আগে আম খেলে গলা বেয়ে রক্ত বেরুবে বলে আমাদের ভয় দেখানো হত । আমরা কত আবেগ নিয়ে এই ১লা বৈশাখের অপেক্ষায় থাকতাম । যেদিন ১লা বৈশাখ সেদিন আমরা দল বেঁধে কাচা আম পাড়তাম, ক্ষেত থেকে ট্মেটো চুরি করতাম, এই ঘর ঐ ঘর থেকে মরিচ , লবণ, বড় পেয়ালা,প্লেট সহ নানা লক্কর ঝক্কর নিয়ে কাঁচা আমের চাটনি বানাতাম। আম কাটতাম সিলন নামক এক প্রকার কাটার দিয়ে। এটা প্রাকৃতিকভাবে তৈরী করতাম। আমাদের পুকুরগুলোয় একপ্রকার শামুক পাওয়া যেত, তার খোলস দিয়ে এই বিশেষ ধরণের কাটার বানাতাম। এখনো আমাদের গ্রামগুলোতে এই রেওয়াজ চলে আসছে।

আমাদের পাশেই ছিল বড়ুয়া পাড়া। বড়ুয়া পাড়াতে কিছু অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে এইদিনটি উত্‍যাপিত হত । আমরা দূর থেকে সেসব অনুষ্ঠান ও খাওয়াদাওয়া দেখতাম। আমাদের খুব যেতে ইচ্ছে করত। কিন্তু আমাদের সেখানে যাওয়া সহজ ছিল না । কলেজে উঠার পর বুঝলাম ১লা বৈশাখ মানে মেলা বসা । কলেজটা মফস্বল এ ছিল। কলেজ আয়োজকরা সেবার বৈশাখী মেলার আয়োজন করে। আমি খুব এক্সাইটেট ছিলাম। আয়োজকদের অন্যতম ছিলাম আমি । ৭টা দোকান মিলেই মেলাটা শেষ হয়। মফস্বল পেরিয়ে যখন চট্টগ্রাম শহরে আসলাম - জানতে পারলাম মঙ্গল শোভাযাত্রা , পান্তা-ইলিশ খাওয়া , মেলায় গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে যাওয়া এসবই পহেলা বৈশাখ। সব মিলায়ে অবাক হলাম । গ্রামে প্রতিদিন জোর পূর্বক যে পান্তা ভাত খাওয়ানো হত সেটা এখানে ১০০ টাকার উপর। এত টাকা দিয়ে কোন সময় পান্তা ভাত খাওয়ার সখ জাগে নাই। ডিসি হিলে তখন এক পাতি ইলিশ ভাজায় ২০০টাকা নিত ! সেবার ভার্সেটিতে বড়ভাইদের সাথে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করি । অনেক প্যাদা খেয়েছিলাম সেবার। সে এক অন্য ইতিহাস। ক্যাম্পাসে সেবার পুরো রাত রঙ দিয়ে আলপণা একেছিলাম।
বাংলা সংস্কৃতির রুট হল গ্রাম । আর শহুরের একদিনের বাঙালীদের বাকী ৩৬৪ দিনের ডিজিটাল রুপ কীভাবে বাংলা সংস্কৃতির পথ হতে পারে ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন