রবিবার, ১৫ জুলাই, ২০১২

খুনের পথে-রহস্য গল্প (অনু গল্প-২) ......রকিবুল হোসেন ।



চুপ করে কিছু সময় বসে রইলাম ।চারদিক নিরব ,রাত দুটো ।
হঠাত্‍ পাশ দিয়ে একটি ধেঁড়ি ইদুঁর দৌঁড় দিল । মাথাটা এখনো ঘুরছে ।
... তবে অনেক চিন্তা থেকে আজ মুক্তি পেলাম ।কাল থেকে আর ঘেনর ঘেনর শব্দ শুনতে হবে না ।

এখন একটু শান্তিতে ঘুমানো উচিত ।কিন্তু লাশটাকে কী করব বুঝতে পারছি না ।

হা হা ...হ্যাঁ ,আমি আমার স্ত্রীকে খুন করেছি ।এখন তাঁর লাশটাকে গুম করার একটা উপায় খুঁজছি ।
আমার স্ত্রীর নাম শৈলী ।আজ দেড় বছর হল আমাদের সংসার ।কিন্তু ও আমায় এতটুকুও ভালোবাসে নি ।
বিয়ের পরও বৈধ একটি সম্পর্ক্য টিকিয়ে রেখেছিল এতদিন ,আর আমার সাথে জগড়া করত প্রতিদিন।
অনেক ভালবাসতাম তাঁকে ,আমার ভালবাসার মূল্য দেই নি এতটুকু ।
কত আর সহ্য করব । তাই বটি দিয়ে গলা কেঁটেছি ।

জলের তেষ্টা পেয়েছে ।ফ্রিজ খুলে ঠান্ডা জল খেলাম ।পকেট থেকে সিগারেটটা ধঁরিয়ে ঠোঁটে দিলাম ।
এখন লাশটাকে কিছু একটা করা ধরকার ।চোঁখে ঘুম পাচ্ছে ,পরিশ্রমটা আজ একটু বেশিই হয়ে গেল মনে হচ্ছে ।
কিছুক্ষণ পর লাশটাকে লক্ষ্য করতেই ,কিছু একটা পরিবর্তন দেখলাম ।
শৈলীর হাত এখন তার গলায় ।কিন্তু কিছুসময় আগেও এরকমটি ছিল না ।কিছুটা ঘাঁবড়ে গেলাম আমি ।
সিগারেটটি শেষে আরেকটি সিগারেট ধরালাম ।

নেশাটা একটু বেশীই হল বোধহয় ,নইলে এরকম ভুতুরে কান্ড কেউ দেখে ?
এখন এক কাপ কফি খেতে ইচ্ছে করছে ।শৈলী বেঁচে থাকলে নিশ্চয় অনিচ্ছার শর্তেও এক কাপ কফি আমায় খাওয়াতো ।
কিন্তু এখন নিজ থেকে করে খেতে হবে ,এই যা ।

হঠাত্‍ রান্না ঘরে টুং টাং আওয়াজ শুনলাম ।মনে কিছুটা ভয় সৃষ্টি হল ।
তবুও ঘুঁটি ঘুঁটি পায়ে রান্না ঘরের দিকে এগুলাম ।
রান্না ঘরে যেতেই ভয়টা সত্যি হল।এই যে আমার স্ত্রী শৈলী !
হাতে তার কফি'র গুড়ো ,চুলোয় আগুন জ্বালানো ।গলা বেঁয়ে অবিরত রক্ত পড়ছে ।
ঠোঁটে দুঃখ মিশানো মিষ্টি হাসির আভা ।আমি আর নড়তে পারছিলাম না ।
কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না ।শরীরটা অবশ হয়ে আসছে ।একসময় মাথাটা ভারী হয়ে আসল ।

কিছু সময় পর শৈলীর কিছু কথা শুনতে পাচ্ছিলাম ।এখন আর একটু স্পষ্টতর শব্দ গুলো :
-রাতুল এই নাও তোমার কফি ।
আমি ভয়ে চোখ খুলতে পারছিলাম না ।আরো কয়েকবার একই ভাবে ডাকা হল ।আমি ভয়ে অস্তির ।
অল্পসময় পর শরীরে একটা মৃদ্যু ধাক্কা খেলাম ।ভয়টা আরো বেড়ে গেল ।
কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না ,ধাক্কাটা প্রতিদিন সকালে শৈলীর হাতে ধাক্কার মত ।ভয়টা একটু কমে আসল ।চোঁখটা ভয়ে ভয়ে খুললাম ।

দেখি ,কফি হাতে শৈলী দাড়িয়ে আছে ।বুঝলাম পুরো ব্যপারটা স্বপ্ন ।

ঘুম থেকে উঠে পুরো ব্যাপারটা আরেকবার মনে করার চেষ্টা করতে লাগলাম ।
আজ ৬ দিন যাবত্‍ এই স্বপ্নটি হুবহু দেখে আসছি ।এখনো শৈলীকে কিছুই জানায় নি ।
তবে স্বপ্নটা আমার পছন্দ হয়েছে ।প্রতিদিন এই একই চিন্তা নিয়ে বাসায় ফিরি ,তবে কী একটা বাঁধা আমায় পেয়ে বসে ।
তবে আজকের ব্যপারটা অন্যরকম লাগছে ।অনেকটা অফিসের কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ করার পর যেমন আনন্দটা লাগে ।

অফিস থেকে ফিরেই শোভার রুমে ডুকলাম ।আজো সে উদ্ভট পারফিউমের গন্ধ , যেটা আমরা দু'জনের কেউই ব্যবহার করি না ।
বুঝলাম ভদ্রলোক প্রতিদিনকার মতো আজও আমার বেড রুমে ডুকেছে ।
প্রতিদিনের মত ব্যপারটা বুঝতে আমার কষ্ট হল না ।

মুখে একগ্লাস হুইসকি ঢেলে সিগারেটটা ধরালাম ।রাত এখন ১টা ।সব প্রস্তুতি হয়ে গেছে ।এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা ,কখন ২টা বাজে ।সময় চলছেই...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন