শনিবার, ১৩ মে, ২০১৭

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের মূল নায়ক ছিলেন আলেমসমাজ ।- লিখেছেনঃ আরজু আহমেদ ।

শাহ আব্দুল আজিজ রহিমাল্লাহ যখন সাড়ে তিনশো পৃষ্ঠার ফতোয়া দিয়ে বললেন- উপমহাদেশ দারুল হারব অর্থাৎ শত্রুকবলিত অঞ্চল এবং প্রত্যেক সাবালক মুসলমানের জন্য লড়াই করা ফরজে আইন হয়ে গেছে, তখন মুসলিমগণ ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। ফলত উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনের শুরুতেই টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হন আলিমরা।
সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ রহ. এরপর বিদ্রোহ করেন। তাঁর বিদ্রোহ ব্যর্থ হলে। পরবর্তীতে ১৮৫৮ এর মে তে হাজী ইমদাদুল্লাহ, মুফতি রশিদ আহমদ গঙ্গুহী, হাফিজ জামান শহীদ কাসেম নানুতভি রহিমাকুমুল্লাসহ শীর্ষ ত্রিশজন আলেম পুনরায় জিহাদের ডাক দেন।
ওলামা সিপাহি জনতার সেই জিহাদে দুই লাখ মানুষ শহীদ হয়েছিলেন। যাতে ১ লাখ ছিলেন সাধারণ জনগণ। এবং কমপক্ষে ৫১ হাজারের অধিক ছিলেন উলামা। যুদ্ধের পর মামলার প্রধান আসামিই ছিলেন আলেমগণ। বিচারের নামে প্রহসন করে হাজার হাজার আলেম ফাসি দেওয়া হয়। এডওয়ার্ড থমাস দিল্লিতে একদিনে ৫০০ আলেমকে হত্যার কথা লিখেন।
আলেমদের হত্যার চিত্রিত রূপ 

ইংরেজ কর্মকর্তা থমাস ল্যু (Thomas Lowe) যিনি ১৮৫৭ এর যুদ্ধে দায়িত্বপালন করেন। তিনি তার স্মৃতি অভিজ্ঞতা 'Rebellion Clerk' এ লিখেন, 'ভারতে মৌলভি ভিন্ন আমাদের জন্য কোনও অন্য কোনও বাধাই ছিল না।' ১৮৫৭ এর সেই উলামা বিদ্রোহ যেটাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার স্বার্থে সিপাহি বিদ্রোহ বলা হচ্ছে সেই বিদ্রোহে রেশ দীর্ঘ বছর ধরে চলে। 'ওয়াবি কেস' নামে পরিচিত সেসব মামলায় হাজার হাজার আলেম হত্যা এবং নির্বাসন দেওয়া হয়। (ছবিতে দেখুন, কিভাবে কামানের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে আলেমদের)।
এত আলেম হত্যা করা হয় যে, আলেমশূণ্য পরিবেশ সৃষ্টি হয় উপমহাদেশে। ইয়ারমুকের যুদ্ধে যেভাবে ৭০ জন হাফেজে কোর'আন শহীদ হলে যেভাবে সাহাবিগণ উদ্বিগ্ন হয়ে কোর'আন সংকলন করেন- এবং সেই হাফেজদের মৃত্যু 'ন্যাশনাল এনিক্সিটি'তে পরিণত হয়। তেমনি উপমহাদেশের আলেম হত্যাও চিন্তিত করে তোলে জীবিত আলেমদের। একইসাথে মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এশলি ইডেন লিখেন, 'শুধু বাঙলাতেই ৮০ হাজার মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।' একদিকে ইংরেজ সরকার নানাভাবে হাজার হাজার আলেম হত্যার ফলে আলেমশূণ্য পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, অপরদিকে মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তদুপরি ইংরেজদের প্রবর্তিত ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থা উপমহাদেশকে ধর্মীয় অজ্ঞতার দিকে ধাবিত করে। আর সে শিক্ষা ব্যবস্থাও স্রেফ উপনিবেশিক শাসন টিকিয়ে রাখতে প্রণীত ছিল।
লর্ড মেকেলের ভাষ্য "এমন এক শ্রেণির লোক প্রস্তুত করিয়া যাইতে হইবে, যাহাদের কৃষ্ণচর্মের নিম্নে ভারতীয় শোণিত (রক্ত) প্রবাহিত হইবে সত্য, কিন্তু রুচি, মতামত ও চিন্তা ও চিন্তার ধারায় তাহারা হইবে সম্পূর্ণ ইংরেজভাবাপন্ন।"( ১৯৩৫ সালের ৭ ডিসেম্বর 'দেশ' পত্রিকা।) এসব কারণেই মুসলমানদের স্বতন্ত্র শিক্ষার জায়গা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয় দেওবন্দ মাদ্রাসা। আর দেওবন্দী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।
নিজেদের শ্রেণি বৈষম্যবিহীন দাবি করা বামরা আজকাল সামাজিক শ্রেণি স্বার্থের সর্বোচ্চ স্তরে নিজেদের দাঁড় করিয়ে 'বিশিষ্ট' বলে পরিচয় জাহির করে ক্বওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি বাতিল করতে বলছেন তারা সেই উপনিবেশবাদীদেরই বর্তমানের বরকন্দাজ। তারা বলছেন, ক্বওমি মাদ্রাসাওয়ালারা নাকি দেশকে পাকিস্তানি চেতনায় নিয়ে যাবে, অথচ এই বিশিষ্টদের একটা বড়ো অংশই তদানীং কোলকাতা থেকে হিজরত করেছিলেন নব্য প্রতিষ্ঠিত ইসলামি প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানে। হয়েছিলেন বেতনভুক কর্মচারী। আজ তারাই সেই জুজুরভয় দেখান।
~সেইসব মে-গুলো বিস্মৃতিতে তলিয়ে গেছে~

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন